টেক জায়ান্ট গুগল সম্প্রতি যেসব মানুষ তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করছে, তাদের মধ্যে অনেকের কলেজেরই ভালো ডিগ্রি নেই। কিন্তু তাদের রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতা ও গুণাগুন। কয়েকটি ধাপে দীর্ঘ সময় নিয়ে এসব প্রার্থীদের বাছাই করে গুগল।
গুগলের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন কোন বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়, তা গুগলের পিপল অপারেশন্স বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ল্যাজলো ব্লকের এক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জেনেছেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক অ্যাডাম ব্রায়ান্ট। এ বিষয় নিয়ে ফোর্বস-এর ব্লগে এক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
১. শেখার ক্ষমতা
কোনোকিছু শেখার দক্ষতা গুগলে নিয়োগ পেতে হলে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরিষ্কারভাবে শেখার ক্ষমতা, নতুন বিষয় তুলে নেওয়ার দক্ষতা, দ্রুত শিখে নেওয়া, বিচ্ছিন্ন নানা বিষয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা ও পরবর্তী ধাপে তা নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি এক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান দ্রুত পরিবর্তনশীল যুগে শেখার দক্ষতা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন বিষয় দ্রুত যারা শিখতে পারে তারা এখন সাফল্য লাভ করে। গুগল, লিংকডইন ও অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ধারণা প্রচলন করে গর্ববোধ করে। এ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই চায় অনুসন্ধিৎসু তরুণদের। যারা ভুল করবে এবং সে ভুল থেকে শিক্ষা নেবে, যারা কোনোকিছু না বুঝলে প্রশ্ন করতে দ্বীধা করবে না এবং এসবের মাধ্যমে নতুন বিষয় শিখে সামনে এগিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ডাচ বিজনেস এক্সিকিউটিভ ও বিজনেস থিওরিস্ট আরি ডে জেউস বলেন, ‘আপনার প্রতিযোগীদের তুলনায় দ্রুত শিখে নেওয়ার ক্ষমতা হতে পারে প্রতিযোগিতায় একমাত্র টেকসই সুবিধা।’
এ বিষয়টি মেনে নিতে হবে এবং সবসময় শেখার চেষ্টা করতে হবে। এ বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিয়োগের সময় প্রার্থীর এ যোগ্যতাটি আছে কি না, তা দেখে নেয়।
২. নেতৃত্বের যোগ্যতা
গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে থেকে নেতৃত্বের যোগ্যতাসম্পন্নদের আলাদা করার চেষ্টা করে। তারা চেষ্টা করে এমন প্রার্থী বের করার, যে অন্যদের গাইড ও অনুপ্রেরণাদাতা হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে তার জব টাইটেল বিবেচনা করা হয় না। আর অন্য কেউ নেতৃত্ব নিলে তাকে সে কাজ করতে সহায়তা করাও যোগ্যতার একটি অংশ।
৩. বিনয় ও ভদ্রতা
একই সময়ে আগ্রহ ও দায়িত্বের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করে বিনয়। আপনার কাছে আসা আনকোরা কোনো কর্মী আপনার চেয়েও ভালো কোনো আইডিয়া দিতে পারেন। এ ছাড়াও তিনি আপনার চেয়ে কোনো বিষয়ে ভালো জানতে পারেন। ফলে এ বিষয়ে ইগোর ভূমিকা একটু ভিন্ন হতে হবে। এক্ষেত্রে থাকতে হবে বড় ও ছোট ইগো। কারো এ গুণ থাকলে তা দ্রুত নিয়োগকারীর নজরে পড়ে।
৪. দায়ীত্ববোধ
গুগল চায় এমন মানুষ নিয়োগ করতে, যার দায়ীত্ববোধ রয়েছে। কোনো সমস্যা সমাধান করতে দায়িত্ব নিয়ে যে সামনে এগিয়ে যায় এবং নতুন বিষয় তৈরি করতে যে আগ্রহবোধ করে। কোনো কর্মীর যদি কাজের প্রতি আগ্রহ না থাকে তাহলে তা প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। কোনো প্রতিষ্ঠানে কীভাবে ভালো কাজ করা যায় সে বিষয়ে ক্রমাগত উৎসাহের সঙ্গে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া কর্মী চায় প্রতিষ্ঠানগুলো।
৫. দক্ষতা
নির্দিষ্ট কোনো টেকনিক্যাল কাজের জন্য নিয়োগ করা না হলে প্রার্থীদের প্রোগ্রামিং বা কোডিং করার দক্ষতা রয়েছে কি না, এ বিষয়টি গুগল নিশ্চিত করে নেয়। এটি তাদের তালিকার পাঁচ নম্বর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর দক্ষতা বলতে সবসময় উন্নত কাজ করার চেষ্টাও বুঝায় তারা। মানুষ যখন কোনো বিষয়ে নিজেকে ‘দক্ষ’ বা ‘অনেক অভিজ্ঞ’ বলে দাবি করে তখন তারা নতুন বিষয় শিখতে চায় না। বিশেষ করে প্রশ্ন করা হলেও তারা তাদের নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গীতে সবসময় আবদ্ধ থাকে এবং সেজন্য সবসময় শক্ত যুক্তি দাঁড় করায়। যদিও প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের মানুষের চেয়ে সবসময় ভালো কোনো সমাধানের খোঁজে থাকা কর্মীদেরই সন্ধান করে।

Kindly Share This Post »»

0 comments :

Post a Comment