মডেলিং পেশা নিয়ে অনেকের আগ্রহের কমতি নেই। তরুণ-তরুণীদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকে এই পেশায়। সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে অনেকেই এ পেশায় আসতে পারছেন না।অনেকে হয়তো ভুল পথে পা বাড়িয়ে বা সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে এ পেশাকে অন্যরকম দৃষ্টিতে দেখছে। সবচেয়ে বড় কথা হল আমরা যে কাজই করি না কেন আমাদের ইচ্ছা শক্তি থাকতে হবে শতকরা একশত ভাগ। তাই যারা মডেলিং করতে চাও তাদের প্রথমেই স্থির করতে হবে মডেলিং এর কোন সেক্টরে তুমি কাজ করতে আগ্রহী। র্যাম্প, প্রিন্ট না টিভি। তবে উচ্চতা একটু বেশি হলে র্যাম্প এ কাজ করতে পারো। তাই যারা এ বিষয়টিকে নিয়ে ভাবছো তাদের জন্য আমাদের আজকের আয়োজন। মডেল হতে চাইলে প্রথমে কি করতে হবে কোথায় কোথায় যোগাযোগ করতে হবে এবং নতুন মডেলদের জন্য কিছু টিপস্ এবার জানিয়ে দিচ্ছি। আসুন আমরা জেনে নেই আমাদের কি কি করণীয়- -
শারীরিক ফিটনেস
জন্মস–ত্রে রূপ খুব কম মানুষেরই থাকে। আমরা পথে ঘাটে যতো সুন্দর বা সুন্দরীই দেখি না কেন চুলচেরা বিশে–ষণে তারা তেমন কিছুই নন। তারপরও আমরা তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি তাদের বেশভূষা, চুলের স্টাইল, হাঁটাচলা, দাঁড়ানোর ভঙ্গি এইসব জিনিসের কারণে। আমরা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন চেহারার মডেল দেখি। এদের সবারই দেহসৌষ্ঠব একই রকম আকর্ষণীয় এমন নয়। কেউ হয়তো িম, আবার কেউ হয়তো একটু মোটা। মোটা বলতে এমন নয় যে আদনান সামী। তাই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমাদের যাতে শরীরের ফিটনেস ভাল থাকে। সেজন্য ব্যায়ামটা জরুরী। ব্যায়াম করে ইয়া মোটা সোটা মাসল বানালে তা কিন্তু না, আবার বডি বিল্ডার হলে তাও কিন্তু না, আগেই বলেছি শরীরের ফিটনেসটাই জরুরী। যাতে একটা ড্রেস পড়লে ভাল লাগবে এবং সুন্দর দেখাবে। মডেল হতে হলে তোমাকে অন্য দশজনের চেয়ে একটু আলাদা হতে হবে।
আত্মবিশ্বাস
শারীরিক ফিটনেস এর পর এবার আপনার প্রয়োজন হবে বসা, দাঁড়ানো, হাঁটাচলার ভঙ্গি ঠিক করা, এক্সপ্রেশন দেয়া। এক্ষেত্রে প্রয়োজন বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেয়া। এজন্য ঢাকাতে কয়েকটি ট্রেনিং স্কুল আছে এবং অনেকে ব্যক্তিগতভাবে দেখাচ্ছেন। সেগুলোতে আপনি যোগাযোগ করতে পারো। আপনার সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য। কিন্তু যার সমর্থ্য নেই তাকে অবশ্যই বাসায় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
নিজে নিজে চেষ্টা করতে হবে। সেজন্য কাউকে অনুসরণ করতে পারো আবার কিছুটা অনুকরণও করতে পারো। আর এসব কাজে চাই আত্মবিশ্বাস। সুতরাং বলতে পারো আত্মবিশ্বাসটাই একটা বড় সম্পদ। কারণ সফল হওয়ার জন্য চাই আত্মবিশ্বাস। আর একটা কথা, যদি লক্ষ্য থাকে অটুট তবে হবে, হবেই জয়। আপনি যখন এ পেশায় আসার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছো তখন আপনি নিশ্চয়ই জানেন আপনার মতো আরো অনেকে সেই চেষ্টাই করে চলেছেন। তাই সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার উপায় কি? সেজন্য আপনাকে তারচেয়েও ভাল করে চেষ্টা করতে হবে। এজন্য আপনাকে পত্রপত্রিকায় দেশী বিদেশী বিভিন্ন মডেলের ছবি, টিভির পর্দায় বিভিন্ন মডেলদেরকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে যাতে করে আপনি অন্যদের ছাড়িয়ে যেতে পারেন। এতে আপনি এমন একটা কিছুর সন্ধান পাবেন অন্যদের ছাড়িয়ে যাবার। সেজন্য আপনার দৃষ্টি সজাগ থাকতে হবে সব সময় তার সাথে উচ্চ মন-মানসিকতার বিষয়টিও গুরুত্বপ–র্ণ, চেহারায় সৌন্দর্য, চোখমুখের মোহময় অভিব্যক্তি, হাঁটাচলার নজরকাড়া ভঙ্গি, কথা বলার স্টাইল, আচরণে বিনয়ী ও ভদ্র ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে আপনার ভেতর এমন একটা ব্যাপার করে ফেলতে হবে যাতে করে আপনার ভেতর গড়ে উঠে সাহস কিংবা আত্মবিশ্বাস। সেটাই শয়নে স্বপনে কল্পনা করতে হবে এবং সেই কল্পনাকে বাসত্মবে রূপ দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে একটা সময় আসবে যখন আপনার মনে হবে আমার ভেতর সফল হডেল হওয়ার ক্ষমতা আছে। এক সময় আপনার ভেতর আত্মবিশ্বাস চলে আসবে।
অভিনয় ক্ষমতা
আত্মবিশ্বাস এর পর আপনি হয়তো ভাবছো আপনার সব সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে। কিন্তু আপনি কি অভিনয় করতে পারেন বড় বড় অভিনেতাদের মত যারা চোখের পলকেই হাসতে জানেন এবং হাসাতে জানেন, কাঁদতে জানে এবং কাঁদাতে জানে। অর্থাত্ আবেদন ফুটিয়ে তোলে। আপনি কি ‘মুভ’ অনুযায়ী নিজেকে এক্সপ্রেস’ করতে পারেন? তাই আপনি অভিনয় ক্ষমতাটাও থাকতে হবে। হয়তো দেখা গেল আপনি একটা টিভির বিজ্ঞাপন করতে গেলে সেখানে আপনাকে কিছুটা হলেও অভিনয় করতে হবে। অথবা দেখা গেল আপনি স্থির চিত্রের (পত্র-পত্রিকায় যে সব বিজ্ঞাপন দেখি) কাজ করতে গেলে সেখানেও কিছুটা অভিনয় ক্ষমতার দরকার হয়। মনে রাখবেন চেহারা আকর্ষণীয় হলেই চলবে না দরকার নিজেকে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রকাশ করার ক্ষমতাও।
পোর্টফোলিও তৈরি
উপরের কাজগুলো সম্পন্ন হওয়ার পর এবার আপনাকে একটা পোর্টফোলিও তৈরি করতে হবে। পোর্টফোলিও এর প্রথম চাহিদা হচ্ছে ফটোসেশন। ভাল কোনো ফটোগ্রাফার দিয়ে করিয়ে নিবে ফটোসেশন, ফটোগ্রাফারই ভাল বুঝবেন কতোগুলো ছবি তুলতে হবে, কিভাবে তুলতে হবে ইত্যাদি। কেবল ছবি তোলাই নয় মডেলের সঠিক মেকআপ, চুলের স্টাইল, যথাযথ পোশাক এবং অন্যান্য জিনিস
নির্বাচন করাও জরুরী। ফটোগ্রাফারই বুঝবেন পোর্টফোলিও এর জন্য ছবি তুলতে গেলে কি কি প্রয়োজন। ফটোসেশন করা হয়ে গেলে পোর্টফোলিওতে আপনাকে আপনার জীবন বৃত্তান্ত্ম বা সিভি দিতে হবে। সিভিতে আপনার নাম, ঠিকানা, উচ্চতা, ওজন, বয়স, চুলের রং, চোখের রং এবং অন্যান্য তথ্য দিতে হবে। সাথে অবশ্যই ফোন নাম্বার দিতে ভুলবো না। আগে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে তাও দিতে পারেন।
খরচপাতি
ফটোসেশন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই অবশ্যই ভাল ফটোগ্রাফারকে বেছে নিতে হবে। একেকজন ফটোগ্রাফারের একেকরকম চার্জ। সেক্ষেত্রে আপনাকে ফুল রিল ছবি তুলতে খরচ পড়বে ৪৫০০-৬০০০/-। হাফ রিল ছবি তুলতে খরচ পড়বে ২৫০০-৩৫০০/-। সাথে প্রিন্ট ও মেকআপ থাকবে।
যোগাযোগ
ছবি তোলা শেষ হয়ে গেলে এবার তোমার পোর্টফোলিও নিয়ে যোগাযোগ করতে হবে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থার সাথে। এক্ষেত্রে আপনাকে হতে হবে সচেতন। কারণ আজকাল পত্রিকায় মডেল বানানোর নামে ঠিকানা বিহীন অনেক চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়। সেখানে নতুন ছেলেমেয়েরা গিয়ে প্রতারিত হয়। তাই ভুল পথে পা না বাড়িয়ে আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে নামকরা বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোতে। ভাগ্য ভাল হলে এবং যারা মডেল কো-অর্ডিনেটর আছেন, তোমার ছবি তাদের পছন্দ হয়ে গেলে ডাক পেয়ে যাবো যেকোনো বিজ্ঞাপনে।
সবশেষ কথা হলো আপনাকে মডেল হতে হলে অবশ্যই বিনয়ী এবং ভদ্র হতে হবে সেই সাথে মেধাও থাকতে হবে। কেননা শেষ পর্যন্ত্ম মেধাবীরাই টিকে থাকে।
মডেলদের জন্য টিপস্
- অবশ্যই শারীরিক ফিটনেস থাকতে হবে। সেজন্য হালকা ব্যায়াম করতে পারো। আগেই বলেছি বডি বিল্ডার হওয়ার দরকার নেই।
- আপনার শরীরের প্রতি যত্ন নিতে হবে।
- নিজেকে আকর্ষক করার মন-মানসিকতা রপ্ত করতে হবে।
- এ বিষয়ের উপর আপনাকে প্রচুর ম্যাগাজিন ঘাটতে হবে। যাতে প্রতিদিনই নতুন কিছু শিখতে পারো এবং প্রতিদিনই নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে পারো।
- আপনাকে কমিটমেন্টের জায়গাগুলো ঠিক রাখতে হবে এবং সময় মেইনটেইন করে চলতে হবে।
- সবশেষ আপনার থাকতে হবে ডেডিকেশন, ডিটারমিনেশন এবং ডেসটিনেশন।
Kindly Share This Post »»
|
|
|
Tweet |

0 comments :
Post a Comment