চার দেয়ালে ঘেরা আপন আলয়। কল্পনার রঙে তো রাঙানো হয়েছে অনেক। রংটা এবার নাহয় স্থায়ী হোক। বাড়ি রং করানোর আগে তাই কিছু বিষয় মাথায় রাখতে পারেন। স্থপতি নাহাস আহমেদ খলিল বলেন, বাড়ি রং করার মাধ্যমে নিজেদের রুচির একটা পরিচয় পাওয়া যায়। তাই আগে পরিকল্পনা ও পরামর্শ করতে পারেন স্থপতি বা ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের সঙ্গে। ঘরের ভেতরে ও বাইরে রং ব্যবহারের ক্ষেত্র আলাদা হওয়া উচিত। ঘরটি যার জন্য তৈরি হচ্ছে, তার সঙ্গে আলাপ করেই রং বাছাই করে নিন।
ঘরের মধ্যে যেখানে আলো পড়বে, সেখানে একটু শীতল ধরনের রংই ভালো মানাবে। তবে ঘরের যেখানে আলো কম আসে, সেখানে হতে পারে উজ্জ্বল রং। ফারজানাস ব্লিসের স্বত্বাধিকারী ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ফারজানা গাজী জানালেন, ঘর হচ্ছে প্রশান্তির একটি জায়গা। তাই, ঘরের মধ্যে রঙের খেলার সঙ্গে মনেরও একটা যোগাযোগ থাকে। যে কারণে শোয়ার ঘরে লাল রং ব্যবহার না করাই ভালো। লাল রং অনেক ক্ষেত্রে রাগ, বিরক্তি বা অস্থিরতা এনে দেয়।
আজকাল বাড়ির একেক ঘরের জন্য একেক ধরনের রং ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাড়ির বাইরের দেয়ালের জন্য একটা, ঘরের ভেতরের জন্য অন্য রং, এ ছাড়া আসবাব বা গ্রিলের জন্য আছে আরেক ধরনের রং।
যে ঘরে যেমন রং
ফ্ল্যাট ছোট হলে ঘরের রং এমন করা উচিত, যেখানে ঘরটা বড় দেখাবে। এখানে হালকা রংই বেছে নেওয়া ভালো।
শোয়ার ঘরে একটু নরম ধরনের রংই ভালো লাগবে। অনেকে আবার ঘরের একটা দেয়ালকে প্রাধান্য দিয়ে রং করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তিন দিকে হালকা রং দিয়ে একটা দেয়ালে গাঢ় কোনো রং দিতে পারেন। এখানে আসতে পারে হলুদ, গোলাপি, ছাই, নীল ইত্যাদি রং। বাচ্চাদের ঘরে রং করার আগে তার সঙ্গে কথা বলে পছন্দ বুঝে নেওয়া যেতে পারে। শিশুর পছন্দের কোনো চরিত্র থাকলে সেটা আঁকিয়ে নিতে পারেন দেয়ালে। তবে এখানে এমন চরিত্রই আঁকা উচিত, যা শিশুর অন্তত পাঁচ-আট বছর পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে।
ঘরে সবুজের ছোঁয়া রাখতে চাইলে খাবারের ঘরটা কাজে লাগানো যেতে পারে। ঘর ছোট হলে এখানে ব্যবহূত জিনিসগুলো একটু সবুজ রঙের হলে সহজেই মানিয়ে যাবে। খাবারের বড় জায়গা থাকলে দেয়ালে হালকা সবুজ রঙের প্রলেপ দিতে পারেন।
বসার ঘরে দিতে পারেন লাল, কমলার মতো উজ্জ্বল রং। তখন আবার এখানকার আসবাবপত্রে থাকতে পারে অন্য রং। মোটকথা, রঙের বৈপরীত্য ফুটিয়ে তুলতে হবে। দেয়ালের রং থেকে ঘর আলাদা করতে সোফা, খাট, পর্দা, বিছানার চাদর, কুশন বালিশ ইত্যাদি জিনিসও ভিন্ন রঙের বেছে নিতে পারেন।
পুরো বাড়ির বাইরের দিকটা রং করাতে চাইলে আশপাশের পরিবেশটা বুঝে নিয়ে রং বাছাই করতে পারেন। পুরো বাড়িতে হালকা কোনো রং ব্যবহার করে বর্ডারে দিতে পারেন গাঢ় রং। বাড়িতে যদি থাই কাচ ব্যবহার করা হয়, তাহলে কালচে বা নীল রং না দেওয়াই ভালো। বাড়ির বাইরে সবুজ গাছপালা থাকলে অন্য রং করা যেতে পারে বাইরের দিকে।
বার্জারের ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপক কাজী মোফরাদ মুনতাসির বলেন, ‘বাড়িতে রং ব্যবহারে ব্যক্তিভেদে পছন্দও ভিন্নতা থাকে। আমরা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ধরনের রঙের শেড বাজারে এনেছি। রঙে উৎপাদনের সময় সিসা ব্যবহার করলে খরচ কমে আসে। তবে এটা শিশুদের জন্য ক্ষতিকর। আমরা তাই রং সিসামুক্ত করেছি।’
রঙের দরদাম
বাজারে নানা ব্র্যান্ডের রং পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে বার্জার, এশিয়ান পেইন্টস, এলিট, রক্সি ইত্যাদি। ব্র্যান্ড ভেদে রঙের দামও হয়ে থাকে ভিন্ন রকম। আবার একই ব্র্যান্ডের নানা দামের রং পাওয়া যাবে। তবে মোটামুটি এনামেল পেইন্টের প্রতি গ্যালন রং কেনা যাবে ৭৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায়। এ ছাড়া প্লাস্টিক রং কেনা যাবে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়।

Kindly Share This Post »»

0 comments :

Post a Comment