বাংলাদেশে ৮ হাজার কোটি টাকা পুরছে প্রতি বছর !
বাংলাদেশে ৮ হাজার কোটি টাকা পুরছে প্রতি বছর ! 
টাকশাল থেকে জন্ম নিয়া টাকার পরিণতি কী? লক্ষ লোকের হাত ঘুরে ছেঁড়া-ফাঁটা অবস্থায় সে পৌঁছায় সারাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভাগীয় শাখায়। সেখানেই সে তার পরিণতিতে পর্যবশিত হয়। পোড়ান হয় তাকে। বাজারে তার স্থানে আসে আবারো টাকশাল থেকে জন্ম নেওয়া নতুন নোট। বছরে কী পরিমাণ টাকা এভাবে পোড়ানো হয়? প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা! চোখ কপালে তোলার মতো অঙ্ক।

দৈনিক মানবজমিনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত এক বছরে ছেঁড়া, ফাটা, পোড়া, রঙ দেয়া, পোকায় খাওয়া, ময়লাযুক্তসহ পুরনো বাতিল টাকা পোড়ানো হয়েছে ৭ হাজার ৭১ কোটি ৯৭ লাখ ৬৮ হাজার ৪০ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পোড়ানো হয়েছে ৫ টাকা, ১০ টাকা ও ২০ টাকার নোট। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পোড়ানো এ টাকার মধ্যে ৫ টাকার নোট সংখ্যা ১৯ কোটি ৯৩ লাখ ২২ হাজার ৭০টি, ১০ টাকার নোট ২০ কোটি ৩১ লাখ ৩৩ হাজার ২৮টি, ২০ টাকার নোট ৪৫ কোটি ৬২ লাখ ১০ হাজার ৩৩টি, ৫০ টাকার নোট ৬৫ কোটি ৩৮ লাখ ১,৪৪৫টি, ১০০ টাকার নোট ১৫ কোটি ৬৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫১৯টি, ৫০০ টাকার নোট ৮ কোটি ৬১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩২টি এবং ১০০০ টাকার নোট রয়েছে ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ৪৬৬টি।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, টাকার অঙ্কে ৫ টাকার নোটের মূল্যমান ৯৯ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ৩৫০ টাকা, ১০ টাকার নোটের মূল্যমান ২০৩ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার ২৮০ টাকা, ২০ টাকার নোটের মূল্যমান ৯১ কোটি ২৮ লাখ ২০ হাজার ৬৬০ টাকা, ৫০ টাকার নোটের মূল্যমান ৩২৬ কোটি ৯০ লাখ ৭২ হাজার ২৫০ টাকা, ১০০ টাকার নোটের মূল্যমান ১ হাজার ৫৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ৫১ হাজার ৯০০ টাকা, ৫০০ টাকার নোটের মূল্যমানের ৪ হাজার ৩০৭ কোটি ৯৯ লাখ ১৬ হাজার, এক হাজার টাকার মূল্যমানের ৪৭৬ কোটি ২৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এই ৭ প্রকার মুদ্রার মোট নোটের সংখ্যা ৭৬ কোটি ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৪২৩টি। পর্যালোচনায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যবহারের দিক দিয়ে নষ্ট হয়েছে ৫ টাকা, ১০ টাকা ও ২০ টাকা এবং ৫০ টাকার নোট।

পত্রিকাটি জানায়, সারা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভাগীয় প্রতিটি শাখায় ছেঁড়া, ফাটা, পোড়া, রঙ দেয়া ও বাতিল টাকা পোড়ানো হয়। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিদিন ছেঁড়া বাতিল টাকা পোড়ানো হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জোয়ারদার ইসরাইল হোসেন জানান, প্রতিদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ছেঁড়া, ফাটা ও পোড়া বাতিল টাকা পোড়ানো হচ্ছে। বিভাগীয় ব্যাংকের পোড়ানো টাকার হিসাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা হয়। ছেঁড়া টাকা পোড়ানোর ফলে সরবরাহে কোন প্রভাব পড়ে কিনা এবং কিভাবে তা পূরণ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে নতুন টাকা ছাপানো হয়। নতুন টাকা দিয়ে কারেন্সি সচল রাখা হয়। টাকা পোড়ানোর ফলে বাজারে কোন প্রভাব পড়ে না। পোড়ানো টাকার জন্য আলাদাভাবে কোন টাকা ছাপানোর প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে দেখা হয় বাজারে কত টাকা ছিল, কত আছে আর চাহিদা কত? এসব কিছুর প্রতি নজর রেখে টাকা ছাপানো হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ও বর্তমানে মতিঝিল অফিসের মহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম ইসলাম খান জানান, ব্যাংকে এসব টাকা আসার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগে গণনা ও পরীক্ষা করা হয় এবং টাকার ভ্যালু নোট করে রাখা হয়। এছাড়া পাঞ্চ করা বাতিল টাকার মধ্যে ভুলক্রমে কোন ভাল টাকা গেল কিনা তা-ও পোড়ানোর আগে খতিয়ে দেখা হয়। তবে ছেঁড়া নোট বিনিময়ের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা রয়েছে। গ্রাহকের ছেঁড়া টাকা মেশিনের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। এক্ষেত্রে ছেঁড়া টাকার পরিমাণ ৫১ শতাংশ হলে গ্রাহক পাবে ৫০ শতাংশ, ৫১ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ হলে পাবে ৭৫ শতাংশ এবং ৭৬ শতাংশ থেকে ৯১ শতাংশ হলেও ৭৫ শতাংশ পাবে। এক্ষেত্রে গ্রাহক সরাসরি ব্যাংকে জমা দিয়ে নতুন টাকা নিতে পারবেন কিন্তু যদি ৯১ শতাংশ এক খণ্ডের হয় পুরো টাকাই পাওয়া যাবে। ৯১ শতাংশ ৩ খণ্ড হলে সরাসরি টাকা বিনিময় করতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারে ফরম পূরণ করে জমা দিলে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পরে নিতে হবে। যেভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে নতুন টাকা সরবরাহ করা হয় ঠিক সেভাবেই পুরাতন ছেঁড়া, ফাটা, পোড়া, পোকায় খাওয়া ও জাল নোট বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায়। এর পর এ টাকাগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েন ভল্টে রাখা হয়। সেখান থেকে বিডি শাখা টাকাগুলো পরীক্ষা করে ও ভ্যালু হিসাব রাখে। সেখান থেকে আবার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কমিটিতে পাঠানো হয় এবং পরীক্ষা করা হয়- এ টাকার সঙ্গে কোন ভাল টাকা আছে কিনা। তার পর চুল্লিতে পোড়ানো হয়।

Kindly Share This Post »»

0 comments :

Post a Comment