জনশূন্য পৃথিবী পথেই কি এই সভ্যতা ? 
চারদিকে যুদ্ধ-বিগ্রহ আর নিউক্লিয়ার বোমার এই যুগে আমাদের ভাবতে হবে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য যারা এখনো পৃথিবীতে আসেনি। একশো দুইশো নয়, ভাবতে তবে এক হাজার বা দুই হাজার বছর পরের প্রজন্মের কথা। চারদিকে দৃষ্টি দিলে তাদের জন্য স্রেফ আশা পুষে রাখা ছাড়া আরো কোনো উপায়ই যেনো নেই। তাই বুকে আশা ধরে রেখে  এসব বিষয়ে কেউ আর তেমন ভাবেন না।
তবে সবাই এ ভাবনা থেকে সরে যাননি। সেই মধ্যযুগের  নস্টারডামস পর্যন্ত এই গ্রহের শেষ পরিণতি জানার চেষ্টা করেছিলেন। 'দ্য টাইম মেশিন' বইয়ে এইচজি ওয়েলস মানবজাতির ভবিষ্যতের পূর্বাভাস পাওয়ার জন্য দৃষ্টিপাত করেছেন।
এসব ভবিষ্যতদ্রষ্টা মানুষের চেষ্টার পরও কিছুই বদলায়নি। যুগ যুগ ধরে মানব জাতি নিজেরাই তার নিজের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আর আধুনিক যুগে এমন অবস্থা হয়েছে যে, ভবিষ্যত পৃথিবী নিয়ে শুধু আশঙ্কাই প্রকাশ করতে হয়। এখন পর্যন্ত আমরা প্রযুক্তিতে বিস্ময়করভাবে এগিয়ে গেলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সামাল দিতে অক্ষম।
মানুষের নিজেরা অদৃশ্যবাদের বিষয়ে অসহায় বোধ করে। বহুদিন থেকেই পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার কথা বলা হচ্ছে বিভিন্ন আলামত দেখে। কিন্তু তা কখন আসবে এবং যদি এসেই পড়ে তবে ভবিষ্যতের মানুষগুলোর জন্য আমরা কী রেখে যাবো তার কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। যদি আমাদের এই বিশাল উন্নতি, বুদ্ধিমত্তা ও মানবতা হারিয়ে যায়, তবে পরের অংশে কী হবে?
মানব জাতির ইতি ঘটবে এমন পাঁচটি ঘটনার কথা এখানে বলেছেন বিশেষজ্ঞ। কিন্তু এই তালিকাই শেষ কথা নয়। আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি এমন 'সুপার ভলকানো' খুঁজে পাওয়া যায় ১৯৭০ এর প্রথম দিকে। আণবিক বোমা বানানোর 'ম্যাটহাটান প্রজেক্ট' এর আগে নিউক্লিয়ার যুদ্ধের কোনো সম্ভাবনা ছিলো না, কিন্তু এখন রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে অনেক কিছু না ঘটার কথা বলা হলেও পরিবেশ ও পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে যেকোনো কিছু ঘটার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এখানে দেখা যাক মানব জাতির ইতি ঘটাতে পারে এমন পাঁচটি বিষয়।
১. নিউক্লিয়ার যুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুটো নিউক্লিয়ার বোমার ব্যবহার হয়। এর ভয়াবহতা প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ করেছে মানব জাতি। সেই থেকে নিউক্লিয়ার বোমার ব্যবহার আর সম্ভব নয় মনে করা হলেও, ক্ষমতাশালীরা কিন্তু এই বোমার মাধ্যমেই নিজেদের ক্ষমতাবান হিসেবে প্রকাশ করছে। কিউবার 'মিসাইল ক্রাইসিস' প্রায় নিউক্লিয়ার বোমায় রূপ নিতে যাচ্ছিল। প্রতি ৬৯ বছরের মধ্যে যদি একবার এই বোমার মালিক হওয়ার চেষ্টা করে কেউ, তবে প্রতি তিনটি ঘটনার মধ্যে একটি সম্ভাবনা থাকে নিউক্লিয়ার যুদ্ধ হওয়ার। আমেরিকা ও সোভিয়েতের ইতিহাস নিউক্লিয়ার যুদ্ধের সম্ভাবনায় পূর্ণ ছিলো। পরিস্থিতি বদলে গেলেও সেই উত্তেজনা এখনো জিইয়ে রাখা হয়েছে এবং সেই সম্ভাবনাকে শুন্যের কোঠায় নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নিউক্লিয়ার যুদ্ধ হলেই পৃথিবীটা মানবশুন্য হতে সময় লাগবে না। পাশাপাশি অন্য হুমকি হচ্ছে 'নিউক্লিয়ার উইন্টার'। জলবায়ু যেভাবে বদলে যাচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে খাদ্যের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে এবং না খেয়ে মারা যাবে মানুষ।
২. বায়োইঞ্জিনিয়ার
যুদ্ধের চেয়ে ভয়াবহ খুনীর রূপ নিতে পারে বায়োইঞ্জিনিয়ার। মানুষের মাঝে রোগ ছড়িয়ে গেলে তার ফলাফল কী হয় তা দেখা গেছে ইউরোপে সিফিলিসের আক্রমণের পর।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা মরণ রোগ তৈরি করতে পারি এবং একে ব্যবহার করা হতে পারে শত্রু নিধনে। ইঁদুরের পক্সে একটি জিনের সংযোজনে স্মল পক্সের জন্ম হয়। সম্প্রতি বার্ড ফ্লুয়ের সংক্রমণ প্রমাণ করেছে যে, বায়োইঞ্জিনিয়ার ক্রমাগত নতুন রোগের সৃষ্টি করছে।
বর্তমানে এই জৈব প্রকৌশল অনেক সহজ ও সস্তা হয়েছে যা মানুষকে আরো রোগ সৃষ্টি করার কাজকে সহজ করবে।
আয়ুম শিনরিকোয়ো নার্ভ গ্যাসের পাশাপাশি অন্যান্য বায়োউইপন ব্যবহার করেছিলেন মানব জাতিকে শেষ করার জন্য। যারা মানুষবিহীন পৃথিবীকে পছন্দ করেন, তাদের সংখ্যা গুটিকয়েক হলেই মানব জাতি তার অন্তিম মুহূর্ত দেখবে।
৩. সুপারইন্টেলিজেন্স
ইন্টেলিজেন্স বা বুদ্ধিমত্তা মানুষকে আজ এতো দূর এনেছে। কিন্তু অনেক কিছু বানাতে ব্যবহার করা হচ্ছে সুপারইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার। এর ব্যবহার দিয়ে মানুষ কল্পনাকে বাস্তবায়িত করছে ঠিকই, তবে এর দ্বারা অসৎ মহা পরিকল্পাকেও বাস্তবায়িত করা অসম্ভব নয়। কারণ সুপারইন্টেলিজেন্স এর মধ্যে মানবিকতা দেওয়া যায়নি।
এ বিষয় নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়টি হলো, আমরা জানি না সুপারইন্টেলিজেন্সের মহা বিস্ফোরণ ঘটতে পারে কিনা, আর ঘটলেই বা কী হতে পারে। তা ছাড়া আমাদের বিজ্ঞান যে হারে কাজ করতে পারে, সুপারইন্টেলিজেন্স তার তুলনায় বিদ্যুৎবেগে কাজ সারতে পারে। তার এ কাজে আমাদের নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে কী ঘটবে আমরা জানি না। এই বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীসতায় ভুগছেন বর্তমানকালের বিজ্ঞানীরা।
৪. ন্যানোটেকনোলজি
একেবারে অণুর আকারের একটি বস্তুর ওপর নিয়ন্ত্রণ নেয় ন্যানোটেকনোলজি। এতে খারাপ কিছুর আশঙ্কা না থাকলেও যদি ধ্বংসের কাজে এর ব্যবহার হয়, তবে তা কীভাবে ঠেকানো যেতে পারে তার কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। যেকোনো কিছুর এমন অতি ক্ষুদ্র সংস্করণ বানানো প্রায় অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে বায়োলজি মৌলিকভাবেই কার্যকর। কিন্তু ন্যানোটেক আমাদের কতো দূর নিয়ে যাবে বোঝা যাচ্ছে না। যদি এটিও ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করা হয়, তবে মানবজাতির ইতি ঘটাতে সবচেয়ে ছোট এবং ভয়ঙ্কর শত্রুর যোগ হবে।
৫. অজানা শত্রু
ওপরের প্রত্যেকটি বিষয় একাই এই পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তারওপর রয়েছে এগুলোর এখন পর্যন্ত না জানতে পারা অধ্যায়। এগুলোর ভবিষ্যত চেহারা কেমন হবে বা এর ব্যবহার কী ধরনের হবে তা এখনো অজানা। আর খারাপ উদ্দেশ্যে যদি ব্যবহার করা হয়, তবে এখনকার নমুনা দেখেই বলা যায় মানবজাতির ইতি এসবেই লুকিয়ে রয়েছে।
এগুলোর পাশে রয়েছে পুরোপুরি অজানা আশঙ্কা যার কেবল আন্দাজ করতে পারছে বিজ্ঞান, ব্যাখ্যা করতে পারছে না।
এই তালিকায় জলবায়ুর পরিবর্তনের করাল গ্রাস এবং উল্কাপিণ্ডের আঘাতের কথা বলা হয়নি। জলবায়ুর পরিবর্তনে যেকোনো প্রাকৃতির দুর্যোগের মোকাবিলা করতে থাকবে মানব জাতি। কোনভাবে হয়তো এদের থামানো যাবে। ভয়ংকর উল্কার আঘাতে মানব জাতির বিশাল অংশ শেষ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু পৃথিবী ধ্বংস করার মতো দুর্যোগ ও উল্কার আঘাতের সম্ভাবনা প্রতি এক মিলিয়ন বছরের মধ্যে একবারেরও কম। তাই এগুলোকেও উপেক্ষা করা হয়েছে।
কিন্তু ওপরের তালিকার বিষয়গুলো মানুষের নিজের তৈরি। তই এর প্রয়োগ তারাই ঘটাতে পারে। আর এসবের শক্তি অসীম যা ঠেকানোর সাধ্য এখন পর্যন্ত বের করা যায়নি। ঠেকানোর একটিই উপায় রয়েছে। তা হলো, এগুলোর প্রয়োগ ঘটতে না দেওয়া। 

Kindly Share This Post »»

0 comments :

Post a Comment